অপরাজেয় থেকে টানা দ্বিতীয়বার গ্লোবাল সুপার লিগের ফাইনালে উঠেছিল রংপুর রাইডার্স। তবে প্রথম রাউন্ডের শেষ ম্যাচেই তাদের ব্যাটিংয়ের (৭৯ রানে অলআউট) বাস্তব চিত্র ধরা পড়েছিল। বৃষ্টির কল্যাণে হার এড়ালেও, সেই রেশ থেকে গেল ফাইনালে। যা বিপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজিটিকে এবার আর চ্যাম্পিয়ন তকমা ধরে রাখতে দেয়নি। স্বাগতিক ফ্র্যাঞ্চাইজি গায়ানা অ্যামাজন ওয়ারিয়র্সের কাছে ৩২ রানে হেরে শিরোপা হাতছাড়া করেছে রংপুর।
অথচ নুরুল হাসান সোহানের রংপুর একমাত্র দল হিসেবে প্রথম রাউন্ডে তিন ম্যাচ জিতেই (আরেক ম্যাচ পরিত্যক্ত) ফাইনালে উঠেছিল। বিপরীতে ৪ ম্যাচের মধ্যে একটিতে হেরে পয়েন্ট টেবিলের দুইয়ে থেকে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে নামে ইমরান তাহিরের নেতৃত্বাধীন গায়ানা অ্যামাজন ওয়ারিয়র্স। শনিবার তারা প্রথম ইনিংসেই জয়ের উপলক্ষ্য তৈরি করে ১৯৬ রানের বড় পুঁজি নিয়ে। যা টুর্নামেন্টটির চলতি আসরে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ।
গ্লোবাল সুপার লিগের পুরো আসরই অনুষ্ঠিত হয়েছে গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে। একই ভেন্যুতে ফাইনালে নেমে স্বাগতিকরা টস জিতে আগে ব্যাটিং নেয়। তাদের শুরুটা কিছুটা রয়েসয়ে করলেও, পাওয়ার প্লে’র পর ঝড় তোলেন জনসন চার্লস ও রহমানউল্লাহ গুরবাজ। দলীয় ২১ রানে ওপেনার এভিন লুইসকে ফেরান রংপুরের বাংলাদেশি পেসার খালেদ আহমেদ। এরপর ১২১ রানের কার্যকর জুটি গড়েন চার্লস-গুরবাজ। রিটায়ার্ড আউট হওয়ার আগে চার্লস ৪৮ বলে ১১ চার ও এক ছক্কায় ৬৭ রান করেন।
খানিক বাদেই আফগান তারকা গুরবাজকে ফেরান তাবরাইজ শামসি। এর আগে তিনি ৩৮ বলে ৬ চার ও ৪টি ছক্কায় ৬৬ রান করেন। এ ছাড়া শেষদিকে ৯ বলে এক চার ও তিন ছক্কায় ২৮ রানের ক্যামিও ইনিংসে দলীয় পুঁজিটা দুইশ’র কাছে নিয়ে যান রোমারিও শেফার্ড। নির্ধারিত ২০ ওভারে গায়ানার সংগ্রহ দাঁড়ায় ৪ উইকেটে ১৯৬ রান। রংপুরের পক্ষে একটি করে উইকেট শিকার করেন খালেদ, শামসি ও ইফতিখার আহমেদ।
ফাইনালের আগপর্যন্ত গ্লোবাল সুপার লিগের এই আসরে সর্বোচ্চ দলীয় পুঁজি ছিল ১৬৭ রান। ফলে কন্ডিশন ও অতীত অভিজ্ঞতা বিবেচনায় রংপুরের জন্য আজ ১৯৭ রানের লক্ষ্যটা বেশ বড়সড়–ই। কিন্তু তাদের শুরুটাই হয় বাজেভাবে, টপঅর্ডারের তিন ব্যাটারই বলার মতো কিছু করতে পারেননি। দলীয় ৬ রানে ইব্রাহীম জাদরানকে (৫) হারিয়ে শুরু, এরপর সৌম্য সরকার (১৩) ও কাইল মায়ার্সের (৫) বিদায়ে ২৯ রানেই নেই রংপুরের ৩ উইকেট। তৃতীয় উইকেটে সাইফ হাসান ও ইফতিখার আহমেদ সেই ধাক্কা সামলানোর চেষ্টা চালান।
এই জুটিতে আসে ৭৩ রান। দ্বিতীয় শিরোপা জয়েরও স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন সাইফ-ইফতিখার। কিন্তু দুর্ভাগ্যের রানআউটে ভাঙে আগ্রাসী হয়ে ওঠা এই জুটি। ইফতিখারের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে ২৬ বলে ৩টি করে চার-ছক্কায় ৪১ রান করে সাইফ আউট হয়ে যান। পাকিস্তানি অলরাউন্ডার ইফতিখারও বেশিক্ষণ টিকতে পারলেন না। ২৯ বলে এক চার ও ৪টি ছক্কায় তার ব্যাটে আসে ৪৬ রান। তাদের বিদায়ে কমতে থাকে রংপুরের জয়ের আশা। সেটি আরও দুরাশায় পরিণত করে আজমতউল্লাহ ওমরজাই (৩) ও অধিনায়ক সোহান (৫) দ্রুতই ফেরেন।
১২৬ রানে ৭ উইকেট হারানো রংপুরের হার তখন কেবলই সময়ের ব্যাপার। ১৭ বলে এক চার ও ৩ ছক্কায় ৩০ রানের ক্যামিওতে তখনও ব্যবধান কমাচ্ছিলেন মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন। শেষ পর্যন্ত ১৯.৫ ওভারে ১৬৪ রানে অলআউট হয় রংপুর। গায়ানার পক্ষে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস। এ ছাড়া অধিনায়ক ইমরান তাহির ও গুদাকেশ মোতি ২টি করে শিকার ধরেন।