পেশাদার রেসলিংকে দুনিয়াব্যাপী জনপ্রিয় করতে যাদের অবদান সবচেয়ে বেশি, সে তালিকায় হাল্ক হোগানের নাম ওপরের দিকেই থাকবে। আমেরিকান সাবেক এ রেসলার ৭১ বছর বয়সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন। ওয়ার্ল্ড ওয়ার্ল্ড রেসলিং এন্টারটেইনমেন্ট (ডাব্লিউডাব্লিউই) গতকাল বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে হোগানের মৃত্যুর বিষয়টি জানিয়েছে।
ডব্লিউডব্লিউই-র বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ডাব্লিউডাব্লিউই গভীর দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছে, হল অব ফেমার হাল্ক হোগান মারা গেছেন। পপ-কালচারের অন্যতম পরিচিত মুখ হোগান ডাব্লিউডাব্লিউইকে ১৯৮০- এর দশকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন।’
ফ্লোরিডার ক্লিয়ারওয়াটার শহরের পুলিশ জানিয়েছে, হোগান নিজ বাড়িতে হার্ট অ্যাটাক করলে বৃহস্পতিবার সকালে খবর পেয়ে তারা দ্রুত সেখানে যান। হোগানকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, সোনালি চুল, চকচকে বাদামি ত্বক ও দৈত্যাকৃতি শরীরের অধিকারী হোগান ছিলেন ১৯৮০-এর দশকে রেসলিংয়ের পোস্টারবয়। ডাব্লিউডাব্লিউই নামের এই ‘মক ফাইটিং’কে বিলিয়ন ডলারের বিনোদন ব্যবসায় রূপ দিতে বড় ভূমিকা রাখেন তিনি।
১৯৮৭ সালে রেসেলমেনিয়া থ্রিতে (WrestleMania III) ৬ ফুট ৮ ইঞ্চির হোগান কানায় কানায় পূর্ণ স্টেডিয়ামে মিশিগানের ৭ ফুট ৮ ইঞ্চি উচ্চতার আন্দ্রে দ্য জায়ান্টকে কাঁধে তুলে একটি শক্তিশালী বডি স্ল্যাম করেছিলেন, যা রেসলিং ইতিহাসে অন্যতম স্মরণীয় মুহূর্ত।
রেসলিংয়ের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে অভিনয় জগতেও পা রেখেছিলেন হোগান। হলিউডের রকি থ্রি (Rocky III) ও সান্তা উইথ মাসলস (Santa With Muscles) এর মতো সিনেমায় অভিনয় করেন হোগান। কিন্তু বক্স অফিসে সিনেমাগুলো তেমন সফলতা পায়নি। এরপর আবারও রেসলিংয়ের রিং লাইফে ফেরত যান হোগান।
হোগান আমেরিকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অন্যতম সমর্থক ছিলেন। গতবছর রিপাবলিকান এ নেতার নির্বাচনি প্রচারও করেছেন কিংবদন্তি এ রেসলার।
১৯৫৩ সালের ১১ আগস্ট জর্জিয়ার অগাস্টায় জন্ম নেওয়া হোগানের জীবনটা সিনেমার মতো। জন্মের পর তাঁর নাম দেওয়া হয়েছিল টেরি জিন বোলিয়া। তাঁর পরিবার জর্জিয়া ছেড়ে একটা পর্যায়ে ফ্লোরিডায় টেম্পায় চলে যায়। সেখানে উচ্চ মাধ্যমিক শেষে স্থানীয় একটি ব্যান্ডের গিটারিস্ট হিসেবে কাজ করতেন হোগান। কিন্তু ১৯৭০-এর দশকে রেসলিং নিয়ে আগ্রহ জন্মায় হোগানের।
প্রচলিত আছে, রেসলিংয়ে নিরুৎসাহিত করতে হোগানের প্রশিক্ষকেরা তাঁর পা ভেঙে দিয়েছিলেন। এরপরও হাল ছাড়েননি তিনি। তাঁর বাইসেপস (বাহু) হয়ে ওঠে ২৪ ইঞ্চি, এ নিয়ে অনেকটা গর্ব করেই হোগান বলতেন ‘২৪ ইঞ্চি পাইথন।’ হোগান অবশ্য পরবর্তীতে স্বীকার করেছেন, রেসলিং অনুশীলন ওজন চর্চায় তিনি স্টেরয়েড ব্যবহার করতেন।
সে সময় টেলিভিশনে প্রদর্শিত কমিক চরিত্র হাল্কের সঙ্গে মিলিয়ে ‘টেরি জিন বিলিয়া’ থেকে তাঁর নাম হয়ে যায় ‘হাল্ক’। আর ‘হোগান’ নামটি দেন ওয়ার্ল্ড রেসলিং ফেডারেশনের (ডাব্লিউডাব্লিউএফ) স্বত্বাধিকারী ভিনসেন্ট জে. ম্যাকমোহন।
বিতর্ককেও সঙ্গী করে চলেছেন হোগান। গসিপ ওয়েবসাইট ‘গকার’ হোগানের একটি সেক্স টেপ ফাঁস করে। এটি নিয়ে গকারের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ভঙ্গের অভিযোগ এনে মামলা করেন হোগান। এ মামলায় ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১৪ কোটি মার্কিন ডলার জেতেন সাবেক কিংবদন্তি রেসলার।
এছাড়া ২০১৫ সালে অন্য আরেকটি গোপন রেকর্ডিং ফাঁস হয় হোগানের। সেখানে বর্ণবাদী মন্তব্য করায় ডাব্লিউডাব্লিউই হোগানকে ছেড়ে দেয়। পরে অবশ্য ২০১৮ সালে আবারও ডাব্লিউডাব্লিউইতে যোগ দেন হোগান।
ব্যক্তিজীবনে তিনবার বিয়ে করেছেন হোগান। তাঁর দুই সন্তান আছে। হোগানের মৃত্যু প্রসঙ্গে ডাব্লিউডাব্লিউই-র অন্যতম স্থপতি ও তাঁর দীর্ঘদিনের সঙ্গী ভিন্স কে. ম্যাকমোহন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স হ্যান্ডেলে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, ‘তিনি ছিলে একজন পথপ্রদর্শক। তিনি আমাদের ছেড়ে গেছেন, কিন্তু রেখে গেছেন তাঁর সেই বিখ্যাত সংলাপ, “ট্রেইন, টেক ইওর ভিটামিনস এন্ড সে ইওর প্রেয়ার।” আজ আমরা তাঁর জন্য প্রার্থনা করছি।’