জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ওপর আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই দলের প্রবীণ নেতারা ‘ঐক্যের বার্তা’ নিয়ে সম্মেলনের ঘোষণা দিয়েছেন। দলের সিনিয়র নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ শুক্রবার (৮ আগস্ট) গুলশানের হাওলাদার টাওয়ারে সংবাদ সম্মেলনে জানান, শনিবার (৯ আগস্ট) ঢাকার গুলশানের ইমানুয়েল কনভেনশন সেন্টারে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল মার্কায় জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, “দলে কোনো ভাগাভাগির প্রশ্ন নেই। এটি এরশাদ সাহেবের নিবন্ধিত জাতীয় পার্টির সম্মেলন, যা ঐক্য ও শৃঙ্খলা রক্ষা করবে।” তিনি আরও জানান, সম্মেলনের মাধ্যমে দলের দায়িত্বশীলতা ও ঐক্যের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হবে।
গত ৭ জুলাই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতাকে পদত্যাগ করতে বললে, ওই নেতারা আদালতের দ্বারস্থ হন। ৩১ জুলাই আদালত জিএম কাদের ও যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলমের সাংগঠনিক কার্যক্রমে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেন। এরপর গত মঙ্গলবার দলের দপ্তর সম্পাদক এম এ রাজ্জাক খান আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন।
এদিকে শুক্রবার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ও মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু একযোগে জাতীয় সম্মেলনের ঘোষণা দেন।
মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, “এই সম্মেলন দলকে আত্মশুদ্ধি ও গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব পুনর্গঠনের মঞ্চ হিসেবে কাজ করবে। জাতীয় পার্টি কোনো ব্যক্তিকেন্দ্রিক দল নয়, এটি একটি আদর্শবোধ সম্পন্ন দল।” তিনি আরও বলেন, সম্মেলনের মাধ্যমে দল নতুন উদ্যমে জনসাধারণের কাছে আত্মপ্রকাশ করবে।
চুন্নু জানান, “এটি তৃণমূলের জাগরণের দিন এবং নবীন ও প্রবীণ নেতাদের সম্মিলনে দেশের ভবিষ্যৎ রূপরেখা গড়ে উঠবে। এটি কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয়, আমাদের নতুন শপথের দিন।”
সংবাদ সম্মেলনে এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার দলীয় নেতৃত্বের মধ্যে মতবিরোধের বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি জানান, “আমরা বারবার জিএম কাদেরকে যৌথ নেতৃত্বের কথা বলেছি, কিন্তু তিনি দলকে একত্রিত করতে ব্যর্থ হয়েছেন।” তিনি অভিযোগ করেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশের মানুষ জাতীয় পার্টির সক্রিয় ভূমিকার প্রত্যাশায় রয়েছে, কিন্তু কাদের সেই সুযোগ সবাইকে বঞ্চিত করতে চেয়েছেন।
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ জানান, আদালতের নির্দেশে অব্যাহতি পাওয়া নেতারা তাদের পদে বহাল রয়েছেন এবং শনিবারের সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন। তিনি বলেন, “আমরা এমন একটি দল গড়ে তুলতে চাই যেখানে দলের মধ্যেও গণতন্ত্র বজায় থাকবে এবং দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে।”
তিনি আরও জানান, দলের সকল অংশকে একীভূত করার চেষ্টা চলছে এবং রওশন এরশাদ ও আনোয়ার হোসেন মঞ্জুরদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে, যারা সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন।
দলের গঠনতন্ত্র সংশোধনের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ভবিষ্যতে কোনো চেয়ারম্যান যেন ইচ্ছামত কমিটি পরিবর্তন করতে না পারে, সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি জিএম কাদেরের আদালতে আপিল না করাকে ‘অস্বাভাবিক’ বলে উল্লেখ করেন।
জাতীয় পার্টির ইতিহাসে একাধিকবার দলের ভাঙনের ঘটনা ঘটেছে। এরশাদের পতনের পর থেকে ১৯৯৭, ১৯৯৮, ২০০১, ২০১৩ এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে দল বিভক্ত হয়েছে। শনিবারের সম্মেলনের মাধ্যমে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ঐক্যবদ্ধ জাতীয় পার্টি গঠনের প্রতিশ্রুতি দেন।