চিকুনগুনিয়ার ঝুঁকিতে ৫৬০ কোটি মানুষ: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

আজকের মতামত ডেস্ক
সংগৃহীত ছবি: ফেসবুক
সংগৃহীত ছবি: ফেসবুক

চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের মহামারি ঠেকাতে এখনই দেশগুলোকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডব্লিউএইচও। এর আগে, দুই দশক আগে বিশ্বজুড়ে মশাবাহিত চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের মহামারি ছড়িয়ে পড়েছিল। স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার জেনেভায় ডব্লিউএইচও—এর মেডিকেল অফিসার ডায়ানা রোজাস আলভারেজ এই আহ্বান জানান।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, দুই দশক আগে যে মহামারির ঘটনা ঘটেছিল তার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে দেশগুলোকে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে নতুন করে ছড়ানো এই ভাইরাস এরই মধ্যে ইউরোপসহ অন্যান্য মহাদেশে পৌঁছেছে।

জেনেভায় সাংবাদিকদের ডব্লিউএইচও—এর মেডিকেল অফিসার ডায়ানা রোজাস আলভারেজ জানান, বিশ্বের ১১৯টি দেশের প্রায় ৫৬০ কোটি মানুষ চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বাস করছেন। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে জ্বর, অস্থিসন্ধিতে তীব্র ব্যথা ও দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।

তিনি বলেন, ‘আমরা ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি দেখতে পাচ্ছি।’ ২০০৪-০৫ সালের চিকুনগুনিয়া মহামারির সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতির মিল খুঁজে পান তিনি। ওই সময় ভাইরাসটি প্রথমে ছোট ছোট দ্বীপাঞ্চলে ছড়ালেও পরে তা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রায় ৫ লাখ মানুষ এতে আক্রান্ত হয়েছিল।

চলতি বছরের শুরুতে ফের নতুন করে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। যেসব ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপ ২০০৪-০৫ সালে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল—লা রিইউনিয়ন, মায়োত্তে এবং মরিশাস, সেখান থেকেই ফের শুরু হয়েছে সংক্রমণ।

রোজাস আলভারেজ জানান, লা রিইউনিয়ন দ্বীপের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ এরই মধ্যে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই ভাইরাস এখন মাদাগাস্কার, সোমালিয়া ও কেনিয়ায় ছড়াচ্ছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ, বিশেষ করে ভারতেও মহামারির মতো ছড়ানোর আলামত মিলেছে।

বিশেষ উদ্বেগের বিষয় হলো—ইউরোপে সম্প্রতি এই ভাইরাস বহন করে আসা রোগীর সংখ্যা বেড়েছে এবং স্থানীয়ভাবে সংক্রমণ ছড়ানোর ঘটনাও দেখা যাচ্ছে। ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, ১ মে থেকে এখন পর্যন্ত কেবল ফ্রান্সেই প্রায় ৮০০টি ‘ইমপোর্টেড’ বা বাইরে থেকে আগত চিকুনগুনিয়া রোগীর সন্ধান মিলেছে।

এ ছাড়া, ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় ১২টি ‘লোকাল ট্রান্সমিশন’ বা স্থানীয়ভাবে ছড়ানোর ঘটনা শনাক্ত হয়েছে। এর মানে হচ্ছে, এসব রোগীরা ভাইরাসবাহক দেশ বা অঞ্চলে না গিয়েও স্থানীয় মশার কামড়ে আক্রান্ত হয়েছেন। গত সপ্তাহে ইতালিতেও এমন একটি সংক্রমণ ধরা পড়েছে।

চিকুনগুনিয়ার কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। এটি মূলত এডিস প্রজাতির মশা—বিশেষ করে ‘টাইগার মশার’ মাধ্যমে ছড়ায়, যেটি আবার ডেঙ্গু ও জিকা ভাইরাসও ছড়ায়। এই ভাইরাস দ্রুত ও ব্যাপকভাবে ছড়াতে পারে। কারণ মশাগুলো দিনে কামড়ায়, তাই প্রতিরোধই এর প্রধান উপায়। এর মধ্যে রয়েছে—মশা তাড়ানোর ওষুধ ব্যবহার, লম্বা হাতার পোশাক পরা এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ।

এলাকার খবর

সম্পর্কিত