পশুর যেসব ত্রুটি থাকলে কুরবানি আদায় হবে না

যুগান্তর প্রতিবেদক
পশুর যেসব ত্রুটি থাকলে কুরবানি আদায় হবে না ছবি: যুগান্তর
পশুর যেসব ত্রুটি থাকলে কুরবানি আদায় হবে না ছবি: যুগান্তর

কুরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। সামর্থ্যবান পুরুষ মহিলার ওপর কুরবানি ওয়াজিব। এটি ইসলামের মৌলিক ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত।  আদম (আ.) থেকে শুরু করে সব নবীর যুগেই কুরবানি পালিত হয়েছে।

Advertisement

 

এটি ‘শাআইরে ইসলাম’ তথা ইসলামের প্রতীকী বিধানাবলির অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং এর মাধ্যমে ‘শাআইরে ইসলামের’ বহিঃপ্রকাশ ঘটে। 

এছাড়া গরিব-দুঃখী ও পাড়া-প্রতিবেশীর আপ্যায়নের ব্যবস্থা হয়। আল্লাহ ও তার রাসুলের শর্তহীন আনুগত্য, ত্যাগ ও বিসর্জনের শিক্ষাও আছে কুরবানিতে। 

নবীজিকে আল্লাহতায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন- আপনি আপনার রবের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন এবং কুরবানি আদায় করুন।  (সুরা কাওসার:২)

অন্য আয়াতে এসেছে- (হে রাসুল!) আপনি বলুন, আমার নামাজ, আমার কুরবানি, আমার জীবন, আমার মরণ রাব্বুল আলামীনের জন্য উৎসর্গিত। (সুরা আনআম: ১৬২)

হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- কুরবানি করার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি কুরবানি করল না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের কাছেও না আসে। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ৩১২৩; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস ৮২৫৬) 

কুরবানি করার জন্য সুস্থ, সবল ও ত্রুটিমুক্ত পশু নির্বাচন করা আবশ্যক। বড় ধরনের ত্রুটি আছে এমন পশু দিয়ে কুরবানি শুদ্ধ হয় না। 

রুগ্ন ও দুর্বল পশুর কুরবানি

এমন শুকনো দুর্বল পশু, যা জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না তা দ্বারা কুরবানি করা জায়েজ নয়। (জামে তিরমিযী ১/২৭৫, আলমগীরী ৫/২৯৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৪)

দাঁত নেই এমন পশুর কুরবানি

যে পশুর একটি দাঁতও নেই বা এত বেশি দাঁত পড়ে গেছে যে, ঘাস বা খাদ্য চিবাতে পারে না এমন পশু দ্বারা কুরবানি করা জায়েজ নয়। (বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৫, আলমগীরী ৫/২৯৮)

যে পশুর শিং ভেঙ্গে বা ফেটে গেছে

যে পশুর শিং একেবারে গোড়া থেকে ভেঙ্গে গেছে, যে কারণে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে পশুর কুরবানি জায়েজ নয়। পক্ষান্তরে যে পশুর অর্ধেক শিং বা কিছু শিং ফেটে বা ভেঙ্গে গেছে বা শিং একেবারে উঠেইনি সে পশু কুরবানি করা জায়েজ। (জামে তিরমিযী ১/২৭৬, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৩৮৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৪, আলমগীরী ৫/২৯৭)

 

আরও পড়ুন

Advertisement

 

 

 

কান বা লেজ কাটা পশুর কুরবানি

যে পশুর লেজ বা কোনো কান অর্ধেক বা তারও বেশি কাটা সে পশুর কুরবানি জায়েজ নয়। আর যদি অর্ধেকের বেশি থাকে তাহলে তার কুরবানি জায়েজ। তবে জন্মগতভাবেই যদি কান ছোট হয় তাহলে অসুবিধা নেই। (জামে তিরমিযী ১/২৭৫, মুসনাদে আহমদ ১/৬১০, ইলাউস সুনান ১৭/২৩৮, কাযীখান ৩/৩৫২, আলমগীরী ৫/২৯৭-২৯৮)

যে পশুর দুটি চোখই অন্ধ বা এক চোখ পুরো নষ্ট সে পশু কুরবানি করা জায়েজ নয়।

গর্ভবতী পশু কুরবানি করা জায়েজ। জবাইয়ের পর যদি বাচ্চা জীবিত পাওয়া যায় তাহলে সেটাও জবাই করতে হবে। তবে প্রসবের সময় আসন্ন হলে সে পশু কুরবানি করা মাকরূহ।

কুরবানির নিয়তে ভালো পশু কেনার পর যদি তাতে এমন কোনো দোষ দেখা দেয় যে কারণে কুরবানি জায়েজ হয় না- তাহলে ওই পশুর কুরবানি সহীহ হবে না। এর স্থলে আরেকটি পশু কুরবানি করতে হবে। তবে ক্রেতা গরিব হলে ত্রুটিযুক্ত পশু দ্বারাই কুরবানি করতে পারবেন।

নিশ্চিত অবগতি না থাকলে যদি বিক্রেতা কুরবানির পশুর বয়স পূর্ণ হয়েছে বলে স্বীকার করে আর পশুর শরীরের অবস্থা দেখেও তাই মনে হয় তাহলে বিক্রেতার কথার ওপর নির্ভর করে পশু কেনা এবং তা দ্বারা কুরবানি করা যাবে।

এলাকার খবর

সম্পর্কিত